গরমে সুস্থ থাকার সহজ উপায় ও হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার ১০টি ঘরোয়া টিপস

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সহজ উপায়গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখা, ডিহাইড্রেশন ওহিস্ট প্রতিরোধে করণীয় কি? জানুন গরমের সুস্থ থাকার সহজ  উপায়, সঠিক খাদ্য তালিকা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা টিপস। 

গরমে-সুস্থ-থাকার-সহজ-উপায়বর্তমানে প্রচন্ড গরমে শুধু পানি শূন্যতা নয়, দেখা দিতে পারে ভয়ংকর হিটস্ট্রোক ও দুর্বলতা। কিভাবে এই গরমে সুস্থ সতেজ থাকবেন, আজকের এই আর্টিকেলে গরমে সুস্থ থাকার সহজ উপায় এবং তার বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী ঘরোয়া টিপস গুলো জেনে নিন।

গরমে সুস্থ থাকার সহজ উপায় ও হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার ১০টি ঘরোয়া টিপস

গরমে সুস্থ থাকার সহজ উপায়

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল অত্যন্ত গরম ও অস্বস্তিকর। এই সময়ে শরীর সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে, বারে পানি শূন্যতা ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারিয়ে যায়, তখন শুধু গরম নয়, বরং অসুস্থ হলে সেটা হয়ে দাঁড়াতে পারে প্রাণঘাতী। তাই প্রয়োজন সচেতনতা, কিছু ঘরোয়া টিপস, আর নিয়মিত স্বাস্থ্য রুটিন। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো গরমের সুস্থ থাকার সহজ উপায়, হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি এবং গরমকালে কি খাবেন আর কি খাবেন না।

শরীর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপায়

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে চাইলে ওষুধ হয়, আগে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলাই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো। যেমন, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস ডাবের পানি খাওয়া শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমায়। সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস আর হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে গরমের কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া দুপুরে বাইরে না গিয়ে ছায়ায় থাকা, মাথা ঢেকে চলাফেরা করা এবং দিনে অন্তত একবার ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাও খুবই উপকারী। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট এই অভ্যাসগুলোই গরমকালের তাপমাত্রা থেকে শরীরকে রাখতে পারে আরামদায়ক ও রোগমুক্ত।

গরমে পানি স্বল্পতা প্রতিরোধে করণীয়

গ্রীষ্মকালের শরীর প্রচুর ঘামার কারণে দেহ থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়, ফলে দেখা দেয় পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। এটি অবহেলা করলে শরীরের দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং এমনকি হিটস্ট্রোকে পর্যন্ত হতে পারে। তাই গরমকালে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরমের সময় এই পানির ঘাটতি পূরণ করতে প্রথমত প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১২গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করাটা অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু তৃষ্ণা লাগলে নয়,, ঘনঘন অল্প করে পানি পান করা জরুরি।

গরমে-সুস্থ-থাকার-সহজ-উপায়পাশাপাশি ডাবের পানি, লেবুর শরবত, বেলের শরবত, তরমুজের রস কিম্বা ওরাও স্যালাইন জাতীয় প্রাকৃতিক পানীয় গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো মূলত শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সহায়তা করে। শরীরের পানি শূন্যতাপূরণ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-কোল্ড ড্রিংস, চা ও কফির পরিমাণ কমান, কারণ এগুলো শরীরের পানি শূন্যতা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং গরমকালের সুস্থ থাকতে চাইলে আগে পানি স্বল্পতা প্রতিরোধ সচেতন হওয়া, কারণ সঠিক সচেতনতার মাধ্যমে শরীর সতেজ ও সক্রিয় থাকবে।

হিটস্টোক থেকে বাঁচার উপায়

গরমে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে, হিটস্টোক হতে পারে, যা খুবই বিপদজনক। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে রোদের সময় বাইরে যাওয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে। তবে কোনো কারণে এই সময় বাহিরে গেলে অবশ্যই ছাতা, টুপি বা সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে এবং হালকা ঢেলেঢালা ও সাদা পোশাক পড়তে হবে। যাতে গরমের সময়ও শরীরের ব্যালেন্স বজায় থাকে।

আরো পড়ুনঃ  কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

সাধারণত প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা, ডাবের পানি ও লেবুর শরবত খাওয়া এবং সাথে ফলমূল বেশি করে খাওয়া শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তবে কোনো কারণে অতিরিক্ত ঘেমে গেলে ছায়ায় গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে এবং মাথায় বা গায়ে ঠান্ডা পানি পর্যাপ্ত ঢালতে হবে। মাথা ঘুরা বা ক্লান্তি অনুভব করলে অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। কারণ হিটস্ট্রোক একটি মরণঘাতী স্বাস্থ্য সমস্যা।

গরমকালে খাদ্য তালিকায় যা রাখবেন

গ্রীষ্মকালে শরীর সুস্থ ও হালকা রাখতে হলে খাদ্য তালিকায় এমন সব খাবার রাখা উচিত যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং পর্যাপ্ত পানির ঘাটতি পূরণ করে। এ সময় পানি জাতীয় খাবার যেমন শসা, তরমুজ, বেল এবং ডাবের পানি প্রতিদিনের খাবারে থাকা অত্যন্ত জরুরি। মূলত এগুলো শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না বরং হজমের সহায়তা করে শরীরের ক্লান্তি কমায়। এছাড়াও দুপুরের খাবারের হালকা ভাতের সঙ্গে টক দই, শাকসবজি ও লেবু রাখলে শরীর থাকে। ভাজাপোড়া বা খুবই মসলা জাতীয় খাবার অথবা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এ জাতীয় খাবার গুলো শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং পানি শূন্যতা তৈরি করে। বিশেষ করে গরমের দিনে অন্তত একবার লেবু পানি খাওয়ার অভ্যাস কে সুস্থ রাখার জন্য খুবই উপকারী।

গরমে শিশুদের যত্ন নেওয়ার উপায়

গরমে শিশুদের শরীর খুব দ্রুত পানি শূন্য হয়ে যায়, তাই এ সময় তাদের একটু বাড়তে যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদেরকে সব সময় চেষ্টা করতে হবে, শিশুরা যেন যথেষ্ট পানীয় তরল খাবার খায়, হালকা সুতির জামা পরে আর দুপুরের রোধ থেকে দূরে থাকে। ঘরটা ঠান্ডা রাখা, হালকা খাবার খাওয়ানো আর সময় মতো গা মুছে যাওয়া গরমের সময় শিশুদের শরীর সুস্থ রাখতে খুব কাজে দেয়। এছাড়াও ঘামাচি বা ত্বকের সমস্যা হলে শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসব ছোট ছোট বিষয় যত্ন নিলেই গরমকালটা শিশুর জন্য অনেক সস্থিদায়ক ও স্বাস্থ্যক হবে।

গরমে বয়স্কদের সুস্থ রাখার কৌশল 

গরমের সময় বয়স্কদের সুস্থ রাখার দিকে অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা তাদের শরীর সহজেই পানি শূন্য হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা করতে হবে, যেন তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খায়। তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত বা ওর স্যালাইন ইত্যাদি। পাশাপাশি হালকা, সুতির কাপড় পরানো উচিত যাতে তাদের শরীরে গরম কম লাগে এবং ঘাম না হয়।

গরমে-সুস্থ-থাকার-সহজ-উপায়সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে দুপুরের প্রচন্ড রোদে যেন তারা বাইরে না যায়, কেননা বয়স্কদের জন্য এই সময়টা ঘরে বিশ্রামে থাকাই ভালো। এছাড়াও বয়স্কদের খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে, তিল ঝাল বা ভারি খাবারের বদলে সহজপাচ্য, ঠান্ডা ধরনের খাবার যেমন ফলমূ্‌ দুই বা জুস দেওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস যেন না লাগে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আর যদি কোন বয়সকে ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগে থাকেন, যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, তাহলে ওষুধ সঠিক সময় খাওয়া এবং শরীর খারাপ লাগলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না অত্যন্ত জরুরি। মূলত এ সকল ছোট ছোট যত্নই বয়স্কদের কে গরমের সময় সুস্থ রাখতে বড় ভূমিকা রাখে

গরমের দিনে কতবার পানি পান করবেন

গরমের দিনে শরীর ঘামার কারণে খুব সহজে পানি শূন্য হয়ে পড়ে, তাই নিয়মিত পানি পান করার জরুরী। সাধারণভাবে দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে গরমের সময় এই পরিমাণ আরো বাড়ানো উচিত। সকালের শুরুতেই এক গ্লাস পানি খাওয়া ভালো, এরপর প্রতিবার বাইরে থেকে ফিরে এসে, ঘাম ধরার পর বা শারীরিক পরিশ্রম করার পরপরই পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে যখন কোন ব্যক্তি পানির ঘাটতিতে ভোগার কারণে মাথা ঘোরা, প্রস্রাবের রং গারো হয়ে যাওয়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়। ওই সময়গুলোতে বেশি বেশি পানি পান করলে এ সকল লক্ষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

গরমে ঘাম বেশি হলে করণীয়

গরমের সুস্থ থাকার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে কয়েকটি কার্যকরী উপায় অবলম্বন করলেই গরমে ঘাম প্রতিরোধ করা সম্ভব। কার্যকরী উপায় গুলো যেমন, গরমে ঘাম বেশি হলে সুতির হালকা কাপড় পরা, ঠান্ডা পানি দিয়ে বার বার শরীর মুছে নেওয়া এবং বেশি বেশি পানি পান করা ইত্যাদি। এছাড়াও আপনার যদি অত্যন্ত বেশি গরম লেগে থাকে তাহলে দিনে দুইবার গোসল করলেও সাধারণভাবে কোন সমস্যা হবে না বরং শরীরে আরো আরাম পাওয়া যাবে। তবে অত্যন্ত ঘামের কারণে শরীরে যদি ঘামাচি বের হয়ে যায় তাহলে বেবি পাউডার বা ঠান্ডা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও আপনার যদি গরমে ঘাম অতিরিক্ত বেশি হয় তাহলে ঘর সবসময় ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন, এটি আপনাকে সুস্থ রাখতে বেশি সহায়তা করবে।

ঘরে ও বাইরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

গরমের দিনে ঘরে থাকলেও এবং বাইরে বের হলেও কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা মানা খুবই জরুরী। ঘরে থাকলে খোলা জানালা দিয়ে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা এবং হালকা খাবার খাওয়া দরকার। সরাসরি ফ্যান বা এসির বাতাস শরীরে না লাগিয়ে আরামদায়ক ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে হবে। 

১১১আরো পড়ুনঃ জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায় 

আর বাইরে যেতে হলে দুপুরের প্রচণ্ড এড়িয়ে চলা উচিত, প্রয়োজনে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করা ভালো। হালকা রঙের সুতির পোশাক পরা, সঙ্গে পানির বোতল রাখা আর রোদ থেকে ফিরে এসেই গা মুছে নেওয়া উচিত। মূলত ঘরেও বাইরে দুই জায়গাতেই এসব ছোট ছোট গরমে সুস্থ থাকার সহজ উপায় মেনে চললেই গরমের কষ্ট অনেকটা কমে যাবে এবং শরীরও স্বাভাবিকভাবে সুস্থ থাকবে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গরমে সুস্থ থাকার সহজ উপায় ও হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার ১০টি ঘরোয়া টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। তাই এ ধরনের আরো সচেতনতামূলক তথ্য জানতে আমাদের যমুনা আইটির সাথেই থাকুন। আর হ্যাঁ, যদি এই আর্টিকেল বিষয়ক কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না, যদি পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

যমুনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ttps://https://www.jomunait24.com//p/contact.html